যে ভুলগুলোর কারণে মনোনয়ন পেলেন না খোকন
আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, বাদ পড়েছেন সাঈদ খোকন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ঘোষণা করেন।
ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাইদ খোকন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় কেন মনোনয়ন পেলেন না খোকন।
দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সম্পর্কে পর্যালোচনা করে দেখা যায় বেশ কিছু ভুলের কারণেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন। যে ভুলগুলোর কারণেই আলোচনায় আসেন খোকন।
ব্যক্তিত্ব স্থাপন করতে না পারা- মেয়র হিসেবে সাইদ খোকন কোনো ব্যক্তিত্ব স্থাপন করতে পারেননি। একজন মেয়রকে বলা হয় নগরপিতা। একজন মেয়র নগরের অভিভাবক।
কিন্তু ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাইদ খোকন নিজেকে আলাদাভাবে বিকশিত করতে পারেননি। নিজেকে পাদপ্রদীপে আনতে পারেননি। কখনোই তাকে নগরপিতা বা নগরের অভিভাবক হিসেবে মনে করেনি দেশের জনগণ।
জনগণ যেন তাকে নগরপিতা মনে করে এবং তিনি নগরের অভিভাবক হতে পারেন এরকম কোনো আচার আচরণ বা দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডও তিনি দেখাতে পারেননি।
ঢাকা দক্ষিণের দৈন্যদশা- সাইদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সময় অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঢাকা দক্ষিণকে আধুনিক, উন্নত এবং একটি পরিশীলিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত সাড়ে চার বছরে সাইদ খোকন তেমন কিছুই করতে পারেননি। বরং ঢাকা দক্ষিণ আরও জীর্ণশীর্ণ, হতদরিদ্র হয়েছে।
বিশেষ করে, দুই সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকন একই সাথে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় আনিসুল হক যেমন ঢাকা উত্তরে অনেক পরিবর্তনের আমেজ এনে দিয়েছিলেন, সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই তাকে নিতে হবে এবং এটা তার একটা বড় ভুল ছিল।
দৃষ্টিভঙ্গীর দুর্বলতা- একটা উন্নত, আধুনিক নগরীর জন্য যে দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন, সেটা কখনোই সাঈদ খোকন দেখাতে পারেননি। তার দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব নগরবাসীকে বিরক্ত করেছে। নগরবাসী আশাহত হয়েছে। এটাও সাঈদ খোকনের একটা বড় ভুল ছিল।
নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে বন্দি ও দুর্নীতি- সাঈদ খোকন নগর ভবনের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে বন্দি হয়েছিলেন। সেখানে টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়সময়ই উঠতো। এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাঈদ খোকন সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং ভুল তথ্য পরিবেশন- সাঈদ খোকন ডেঙ্গু মোকাবেলার ক্ষেত্রে শুধু ব্যর্থতার পরিচয়ই দেননি, বরং ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এবং অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড দেখিয়ে নগরবাসীর বিরক্তির উদ্রেক করেছিলেন।
এ কারণে ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ মানুষ ডেঙ্গু মোকাবেলায় সাঈদ খোকন এবং সিটি করপোরেশনকে বেশি দায়ী করেছেন। এই ব্যর্থতা নিয়ে আগামী নির্বাচন মোকাবেলা তার জন্য কষ্টকর হতো। কাজেই ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতা সাঈদ খোকনের বড় ভুল ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করেন।
নেতা হিসেবেও ব্যর্থ- দলীয় টিকেটে নির্বাচিত একজন মেয়রের সাংগঠনিক কিছু দায়িত্ব থাকে। কিন্তু সাঈদ খোকনকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তেমন কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বরং তিনি দলীয় কোন্দলে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। যে কারণে তিনি মেয়র হিসেবে সফল নাকি ব্যর্থ, তার চেয়েও বড় বিষয় হলো তিনি নিজেকে একজন নেতা হিসেবে উদ্ভাসিত করতে পারেননি।
জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারেননি- একজন মেয়রের কাছে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে যে তিনি ন্যায়নিষ্ঠ হবেন। যেকোনো সমস্যায় তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু পুরান ঢাকা এলাকায় একের পর এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রকম সমস্যাকে প্রায়ই তিনি উপেক্ষার চোখে দেখেছেন। সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য নগরবাসীকে সাথে নিয়ে দাঁড়াতেও তিনি পারেননি।
সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতা- একজন সিটি করপোরেশনের মেয়রকে কাজ করার ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হয়। এই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপিদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়।
সাঈদ খোকন সেটি করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এমপিদের সঙ্গে তার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না।
এই ভুলগুলোর কারণেই মেয়র পদে সাঈদ খোকন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।